Posts

অথ ভ্রম-ন-কাহিনী - পর্ব ৫

নাও ছাড়িয়া দে, পাল উড়াইয়া দে ---------------------------------- বাসটা সামনে দিয়ে দুলে দুলে বেরিয়ে যাচ্ছিল, আর আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম পাশে। মাথার মধ্যে যেন চিন্তাগুলো জলপোকার মত ছোটাছুটি করছিল। হোটেল থেকে বেরিয়েছি সেই সকালে, হোটেলওয়ালা জানে রাতে ফিরবো, এখন না ফিরলে যদি ঘরে ঢুকে টাকাগুলো মেরে দেয়। যদি পাওয়া যাচ্ছে না বলে পুলিশে খবর দেয়। যদি খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেয়! বাড়িতে যদি খবর পৌঁছে যায় - মা তো হার্টফেল করে মরেই যাবে। অন্যদিকে বিশু বাসে উঠে গেছে, ওর কাছে টাকা নেই, মানে মাঝ পথে নামিয়ে দেবে, ফিরবে কি করে জানা নেই। ব্যাটা যা গোঁয়ার জোর করে না নামিয়ে দিলে নামবে না। আর এই বাস তো ইলামবাজারের পরে আর যাবে না। ওর কাছে ঠিকানাও নেই। করবেটা কি ওখানে গিয়ে! যদি কোন রকমে গিয়েও পৌঁছায়, মামা তো ওকে চেনেও না, যদি ঢুকতে না দেয়! বেঘোরে মারা পড়বে তো শেষে। কথাগুলো পড়তে যত সময় লাগল, তার দশ ভাগের এক ভাগ সময়ে এইসব চিন্তা আমার মাথায় খেলে গেল। শেষমেশ যা থাকে কপালে, এক যাত্রায় পৃথক ফল হয় কেন, ভেবে বাসে উঠে পড়লুম। বিশু ডানদিকের একটা জানলা ঘেষে বসেছিল, আমাকে দেখে জায়গা ছেড়ে দিয়ে আমাকে জানলার পাশে বসতে দিল, এ...

গরু

অনেক দিন আগে জম্বুদ্বীপে একটা গরু ছিল। বেওয়ারিশ অনাথ গরু। তার মা-বাপ, ভাই-বেরাদর, প্রেমিক-সৌহর কেউ কিচ্ছু ছিল না। একটা নদীর তীরে, একটা চমৎকার ঘাসজমি ছিল, সেখানে সে মহানন্দে ঘাস খেয়ে বেড়াত। গরুটার পেট ছিল সাফ। তাই পেট ভরে ঘাস খেয়ে সকাল বেলায় সে মাঠভরে ইয়ে করে রাখত। আর সেই সারে, আবার ঘাসগুলো লকলকিয়ে বেড়ে উঠত। তেষ্টা পেলে নদী থেকে চকচক করে জল খেত সে। আশেপাশে বন জঙ্গল থাকলেও, তাতে একটাও কেঁদোবাঘ, গুলবাঘ, লক্কড়, হুড়ার কিচ্ছু ছিল না। মায় একটা ভাল্লুকও ছিল না। নদীতে কুমীর, কামঠ, হাঙর মায় গঙ্গাদেবীর বাহন মকর অবধি ছিল না। লাইফ ওয়াস সো কুল ফর দ্যাট গাই! এমনি করে দিন যাচ্ছিল, হঠাৎ একদিন গরুটা দেখে কি, কতগুলো অদ্ভুত জানোয়ার বন থেকে পিলপিল করে বেরিয়ে আসছে। তাদের হাতে নানা রকম লম্বা বেঁটে লাঠি, তার আগায় আবার চকচকে ধারালো কি একটা লাগানো। তাই দিয়ে তারা কচকচ করে ঘাস কাটতে লাগল, বন পরিস্কার করতে লাগল। গরুটাকে হ্যাট হ্যাট করে তাড়িয়ে দিল। হ্যাট শুনে গরুটা ভাবল ওকে ওদের মাথা চড়তে বলছে, তাই সে সামনের দুইপা বাগিয়ে যেই না একটা জানোয়ারের মাথায় চড়ে বসতে গেছে, অমনি বাকি কটা ষণ্ডাটাইপের জানোয়ার লম্বা লাঠির আগায় ধ...

বাবলুদার বিভ্রাট

বাবলুদা সকাল থেকে প্রচন্ড রেগে আছেন। মানে যাকে বলে আগ্নেয়গিরি হয়ে আছেন, বহ্নিমান ধুমাৎ এক্কেবারে! কেউ টোকা দিলেই চলকে পড়বে। সেই জন্যেই কেউ টোকা দিচ্ছে না, সকাল থেকে চাকর থেকে শুরু করে বুড়ি মা অবধি পাশ কাটিয়ে পা টিপে টিপে চলছে। তাতে উনি আরো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠছেন।  অবশ্য রাগ হবার কারণ আছে। বাবলুদা নিজ্যস ভদ্রলোক, কারুর সাতেপাঁচে থাকেন না। সকালে টিফিন করে লাঞ্চবাক্স প্লাস্টিকে ভরে, বগলদাবা করে আপিস যান। সন্ধ্যে সাতটায় আপিস থেকে ফিরে খবর আর সিরিয়াল দেখে, রাতের খাওয়া খেয়ে শুয়ে পড়েন। নিপাট ভালোমানুষ যাদের বলে, বাবলুদা তাদেরই একজন। দাদা পাড়ার পুজোয় চাঁদা দেন পাড়ার ছোকরাদের মাস্তানি এড়াতে, অটোস্ট্যান্ডের বিশ্বকর্মা পুজোয় চাঁদা দেন অটোওয়ালাদের মন রাখতে, ঝি-চাকরকে পুজোর বখশিস দেন তাদের মন রাখতে, বসকে তোয়াজ করেন আপিসের গুডবুকে থাকতে, কোলিগদের মাঝে মাঝে চা-সিগারেট খাওয়ান পি এন পি সি এড়াতে। কিন্তু কিছুতেই কারো মন পাবার উপায় নেই। পাড়ার মাস্তানরা ফি বছর চাঁদা বাড়িয়ে চলেছে। নিত্যি তেলের দাম বাড়ছে বলে অটোভাড়াও চড়চড়িয়ে বাড়ছে। তেলের দাম বাড়লে যদি ভাড়া বাড়ে, তবে কমলে সে ভাড়া কমা উচিৎ, কিন্তু বাবলুদা...

আসুন গাছ কাটি

আসুন গাছ কাটি। গাছ ভারি বিরক্তিকর। গাছ রাস্তা আটকে দাঁড়ায়, বাড়ি বা কলকারখানা বানাতে বাধা দেয়। আগাছা, শ্যাওলার মত সারা পৃথিবী ভর্তি গাছ, দেখলেই গা ঘিন ঘিন করে। শোনা যায় স্পেস থেকে নাকী পৃথিবীকে দেখলে দেখা যায় নীলের উপরে সবুজ ছোপ ছোপ। ভেবে দেখুন নীল রক্তের পৃথিবীতে সবুজ রঙের শ্যাওলা। কি বিরক্তিকর! চোখের আরাম ওখানেই শেষ। তাই আসুন এই বিরক্তির অবসান ঘটাই। আসুন গাছ কাটি। গাছ গরু না, শুওর না। গাছ কাটলে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লাগে না। গাছ কাটলে রক্ত পড়ে না, তাই গাছ কাটা যায়। রাস্তায় যেতে যেতে, কারো গাছে সুন্দর ফুল দেখলে আসুন টেনে ছিঁড়ে নি, দুটো ডাল ভাঙি, পাতাগুলো রাস্তায় ছড়াতে ছড়াতে যাই। গাছ তেড়ে আসবে না। শিং নেড়ে গুঁতাবে না। গাছ কাটতে তাই মানা নেই। আপনি উন্নয়ন চান না?  আপনি চান না রাস্তার সম্প্রসারন হয়ে, ট্রাফিক কমিয়ে, সহজে আপনার গন্তব্যে পৌঁছাতে? সেই জন্যেই তো আপনি গাড়ি কিনেছেন, আপনার পাড়া প্রতিবেশী সবাই গাড়ি কিনেছেন যাতে খুব জলদি যেতে পারেন, অথচ সরকার আপনাকে চওড়া রাস্তা বানিয়ে দিচ্ছে না, একি কম অপরাধ? রাস্তার উপরে বেআইনি নির্মান হয়ে আছে, ওদের সরানো যাবে না। ওরা তো মানুষ, কিম্বা তার চেয়েও ...

ছুটির দিনের কিস্যা - চোর

তা আমার যখন চার পাঁচ বছর বয়স তখন একবার গেলাম দীঘা। সেখানে গিয়ে যা হয়েছিল সে সব আর বললাম না। নাকে মুখে জল ঢুকে সদ্দি লেগে গেল। ফিরে এসে দেখি ঘদ্দোর সব তছ নছ করে গেছে কোন হারামজাদায়। আমার সাধের এম১৬ রাইফেল্টা ভেঙে দিয়ে গেছিলো তাতেই আরো রাগ হল। রাগের চোটে আমি পা পিছলে আলুদ্দম হলাম। সেও এক কেচ্ছা। মজা হল বাড়িতে তো কিছুই ছিল না। একটা আদ্যিকালের ট্রানজিস্টার আর একটা রেডিও। আর কিছু বই ছিল। ফলে ব্যাটারা কিছুই পায় নি। মার কটা শাড়ি ছিঁড়ে রেখে গেছিল। এসব দেখে চোরেদের উপরে রাগই হল খুব। খালি মনে হত একটা চোর যদি পেতাম তবে পিটিয়েই মেরে দিতাম। অবশ্য চোর দেখতে কেমন হয় তা জানতাম না। দেখতে পেলে হাঁটুতে হাঁটুতে জোড়া লেগে ঠক ঠক শব্দ হবার হেবি চান্স ছিল। তার কয়েক বছর পরে এক পনেরই আগস্টে মাঠে পতাকাত্তোলোন টোলন করে পাড়ার বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারছি। ছুটির দিন, অর্থাৎ দিনদুপুরেই আমাদের ফুটবল খেলা হবে, আমরা খুব উত্তেজিত। সব টিম মেম্বাররা বসে খুব প্ল্যান করছি এমন সময় বাবু এসে জানালো, জানিস পাড়ায় একটা চোর ধরা পড়েছে। মান্তুদা কুন্তলকাকারা খুব ক্যালাচ্ছে। শুনেই আমার তো হেবি উত্তেজনা চেপে গেল। চল তো দেখে আসি বলে দৌড় ল...

ভ্যান গগ ও একটি কুৎসিত তৈলচিত্র

Image
রঙ! শব্দটা শুনলে একটা অদ্ভুত অনুভূতি জাগে মনে। হঠাৎ যেন মনে হয় কেউ এক মুঠো লাল - হলুদ আবির ছড়িয়ে দিল হাওয়ায়। রঙ শুনলে আমার কেন জানি মনে হয়, একটা ক্যানভাসে খুব পাৎলা করে কেউ ক্রিমসন রেডের একটা শেডের উপরে ক্রোম ইয়োলোর এক পোঁচ ভেজা রঙ লাগিয়েছে। আপনাদের কি মনে হয়? নিশ্চই অন্য কিছুর সাথে আপনারা রঙকে রিলেট করেন। রঙ শুধু একটা শব্দ, একটা বিশেষ্য পদ, যা দিয়ে সব রকম রঙের কথা বলা যায়। শব্দটি সাবজেক্টিভ নয় কোয়ালিটেটিভ। কিন্তু আমি যদি বলি আপেল কিম্বা স্ট্রবেরী? অমনি আপনার মনের মধ্যে লাল রঙের একটা ছবি ভেসে ওঠে তাই না! কিন্তু আপনার দেখা লাল আর আমার দেখা লাল কি একই? রঙ কিন্তু আসলে একটা ইলিউশান মাত্র। রঙ আপনার পরিচিত কোন বস্তু বা ফিজিক্যাল কিছু নয়। এমনকি এটা একটা ফিজিক্যাল নিয়মও নয়। রঙ আছে শুধু আপনার মাথার ভেতরেই। আসলে ভিজিবল ওয়েভলেন্থের কিছু অংশকে আমাদের ব্রেন যেভাবে ইন্ট্রারপ্রেট করে তাই হল রঙ। সেইজন্যেই আপনি যে রঙ দেখেন আমি সেই রঙ দেখি কিনা কেউ বলতে পারে না। ঠিক একই ভাবে গন্ধও কোন সাবজেক্টিভ ফিলিং নয়। কোন স্পেসিফিক মলিকুল আমাদের ঘ্রাণেন্দ্রিয়কে যেভাবে এফেক্ট করে তাই আমাদের গন্ধ চেনায়। দার্শনিকরা বা ...

আদমচরিত (নকল)

(এ গল্পখানি নিতান্ত টোকা। মূল গল্পটি সচলায়তন ব্লগের মুখফোড়ের লেখা আদমচরিত ০৪৫... মূল গল্পটির লিঙ্ক এখানে - http://www.sachalayatan.com/node/41918 আমার মনে হয়েছিল এই গল্পটা শরদিন্দুর ভাষায় বেশি খুলবে, তাই একটু লিখেছিলাম। গল্পের কাঠামো আর চিন্তাভাবনা মূল লেখকের। তাই এর পুরো কৃতিত্বই তারই পাওনা। আমি শুধু একটু পোষাক পালটে দিয়েছি)  প্রদোষকালে স্বর্গপ্রাসাদের অলিন্দে দাঁড়াইয়া, সান্ধ্যনির্জনতা উপভোগ করিতেছিলেন ঈশ্বর, এমন সময় প্রতিহারী আসিয়া জানাইল যে আদম দর্শণপ্রার্থী। নিজকক্ষে ফিরিয়া আদমকে দেখিয়া চমকাইয়া গেলেন ঈশ্বর। বিস্রস্ত পত্রাবাস, উস্কোখুস্কো চুল, রাঙা চোখ, হাতদুটি দিয়া নিজ লজ্জানিবারণ করিতেছে সে। ঈশ্বর বেদম চটিয়া বললেন, এ অবস্থায় আমার কাছে আসিতে তোমার লজ্জা হওয়া উচিৎ আদম। আবার জ্ঞানবৃক্ষের ফল খাইয়াছো নাকি? আদম কাঁদোকাঁদো সুরে বলিল, না প্রভো, ঐ ঈভ আমার এই দশা করিয়াছে! ঈশ্বর চমকাইয়া উঠলেন, ঈভ! সামান্যা নারী তোমার এই হাল করিয়াছে! ইহা কিরূপে সম্ভব। আদম ফোঁপাইয়া উঠিল, বলিল, উহাকে সামান্যা নারী ভাবিবেন না প্রভো। আপনি উহার বেশবাস সংবৃত করিতে বলুন। সামান্য পত্রাবাসে উহার যৌবন ঢাকা পড়ে না। ...